বার কাউন্সিল পরিক্ষায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭ এর চূড়ান্ত সাজেশন

 শিরোনামঃ

  • ইচছাধীন ক্ষমতা আদালতের স্বেচ্ছাচারিতা নয়। তা আদালতের বিচার বিভাগীয় মূলনীতি দ্বারা পরিচালিত এবং আপীল দ্বারা সংশোধনযোগ্য।
  •  খেসারত পরিশোধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করে না।
  •  সুর্নিদিষ্ট প্রতিকার আইন হলে সেই আইন যে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের কথা বলা আছে।
  •  সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কবে থেকে কার্যকর? উত্তরঃ ১লা মে।
  •  সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের সংশোধনী কবে থেকে কার্যকর? উত্তরঃ ১লা জুলাই।
  •  সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ব্রিটিশ ইক্যুইটি থেকে উৎপত্তি।
  • দেওয়ানী মামলা দায়েরের মাধ্যমে বাদী আদালতের নিকট যে প্রতিকার প্রার্থনা করে এবং আদালত সেই প্রতিকার অনুযায়ী ডিক্রির সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করে। সে আইনের দ্বারা উক্ত প্রতিকার মঞ্জুর করা হয় তাকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন বলে।
  •  বাধ্যবাধকতা বলতে আইন দ্বারা বলবৎ প্রতিটি কর্তব্য এর অন্তর্ভূক্ত হবে।
  •  জিম্মা বলতে প্রত্যেক ধরনের সুস্পষ্ট ই্িঙ্গতবাহক অথবা আনুষাঙ্গিক বিশ্বাস পূর্বক মালিকানা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
  •  সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ও সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একে অপরের সাথে কিরূপ সম্পৃক্ত?
    (ক) মৎস ন্যায়, (খ) তমসাজন্ন, (গ) মুদ্রার এপিঠ ওপিট। উত্তরঃ (গ)
  •  সালিশ আইনের বিধান ব্যতিরেকে চুক্তির সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন সম্ভব।

 ধারা-৫ঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অর্জনযোগ্য প্রতিকার আইনের সংজ্ঞা দান ও সংশোধন যুক্তিগ্রাহ্যভাবে প্রকাশ করে। ৫ ধারাতে ৫ ভাবে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়ার নিয়মঃ

ক) অর্পন বা হস্তান্তরের মাধ্যমে,

খ) চুক্তিপ্রবল বা বাস্তবায়নের মাধ্যমে (যে চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আদালত প্রতিকার দেয়, ঘোষনার মাধ্যমে),

গ) ঘোষণার মাধ্যমে,

ঘ) নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে,

ঙ) রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে।

ধারা-২২ঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ডিক্রী প্রদান আদালতের ইচ্ছাধীন ও স্বেচ্ছাধীন/ স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতা। যেমন- স্থায়ী, আদেশাত্মক, ঘোষণামূলক ইত্যাদি প্রতিকারের মামলায় আদালতের ডিক্রী প্রদান হলো ইচ্ছাধীন বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। অর্থাৎ উপরোক্ত ৫ প্রকারের ক্ষেত্রে একই।

ধারা-৭ঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে কোন দন্ড বা শাস্তির বিধান নাই। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন কাউকে জরিমানা করতে পারবে না বা কারো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না কিন্তু ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারবে।

ধারা-১৯ঃ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে স্থাবর সম্পত্তিতে ক্ষতিপূরনের মামলা দেওয়ানী কার্যবিধির ১৯ ধারায় করতে হয়। উল্লেখ্য যে, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের মামলা দেওয়ানী কার্যবিধির ১৯ ধারায় করতে হয়।

ধারা-৮ঃ স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব পুনরুদ্ধার বা স্বত্ব ঘোষনার মামলা বা স্বত্ব দখলের মামলা বা জবর দখলের মামলা এগুলো সব ৮ ধারায় করতে হয।

স্বত্ব ঘোষনার মামলা কত ধারায় করতে হয়?
(ক) ৮ ধারায়, (খ) ৮ ও ৪২ ধারায়, (গ) ৪২ ধারায়, (ঘ) ৯ ধারায়। উত্তরঃ (গ) ৪২ ধারায়।

স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব ঘোষনার মামলা কত ধারায় করতে হয়?
(ক) ৮ ধারায়, (খ) ৮ ও ৪২ ধারায়, (গ) ৪২ ধারায়, (ঘ) ৯ ধারায়। উত্তরঃ (খ) ৮ ও ৪২ ধারায়।

শুধুমাত্র ৮ ধারায় মামলা করা যায না। ৮ ধারায় মামলা করতে হলে ৪২ ধারাকে প্রয়োজন হয়। কিন্তু ৪২ ধারায় মামলা করতে হলে ৮ ধারাকে প্রয়োজন নাই।

৮ ও ৪২ ধারার মামলাকে স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলে।
৮ ধারায় মামলার কোর্ট ফি মূল্যানুপাতিক।
৮ ধারার মামলার তামাদিকাল ১২ বছর। ৮ ধারার মামলা ১২ বছরের মধ্যে করতে হয়।
৮ ও ৪২ ধারার মামলায় ডিক্রিজারীর প্রয়োজন নাই।

ধারা-৯ঃ স্থাবর সম্পত্তির সাথে স্বত্ব ব্যতিত দখল বেদখল থাকলেই ৯ ধারা হবে। স্থাবর সম্পত্তির দখল বেদখলের মামরা করতে হলে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

(১) তার সম্পত্তি ব্যতিত তাকে বেদখল করা হয়েছে।
(২) আইনপন্থা ব্যতিত বা বেআইনীভাবে তাকে বেদখল করা হয়েছে।
(৩) ৬ মাসের মধ্যে তাকে বেদখল করা হয়েছে অর্থাৎ ৯ ধারায় মামলার তামাদিকাল ১৮০ দিন।

সুরজিৎ সেনগুপ্ত ধানমন্ডি হাউজিং এর ১০নং প্লটের মালিক ও দখলকার ১০/০১/২০১১ ইং তারিখে সুরঞ্জিত বাবুকে কার্তিক বাবু একটি ভূয়া দলিলের মাধ্যমে জমি হতে উচ্ছেদ করে ০২/১০/২০১২ ইং তারিখে উক্ত দখল পুনরুদ্ধারের প্রতিকার চাইলে সুরঞ্জিত বাবুকে কি প্রতিকার দিবেন?

(ক) ধারা ৯, (খ) ধারা-৮, (গ) ধারা ৮ ও ৪২, (ঘ) ধারা ৪২। উত্তরঃ (গ) ধারা ৮ ও ৪২।

৯ ধারার মামলা সরকারের বিরুদ্ধে করা যায় না। এর কোর্ট ফি মূল্যানুপাতিক এর অর্ধেক।

সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এর ফল কি?
(ক) মামলা খারিজ, (খ) আরজি খারিজ, (গ) ডিক্রি, (ঘ) রিভিশন। উত্তরঃ (খ) আরজি খারিজ।
যেহেতু অন্য আইন দ্বারা বারিত এজন্য আরজি খারিজ।

৯ ধারা মামলায় ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল, রিভিউ করা যায় না, সব সময় রিভিশন করতে হয়।

৯ ধারার ডিক্রির বিরুদ্ধে কোথায় রিভিশন করতে হয়?
(ক) জেলা জজ, (খ) দায়রা জজ, (গ) হাইকোর্ট, (ঘ) একটি আদালতে। উত্তরঃ (গ) হাইকোর্ট।

যে ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল চলে না সেই ডিক্রির বিরুদ্ধে রিভিশন করতে হয় হাইকোর্টে।

ধারা-১০ঃ অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের মামলা ১০ ধারায় করতে হয়। অস্থাবর সম্পত্তি বলতে যে কোন বস্তু বা মালামাল এবং সর্ব প্রকার দলিল অন্তর্ভূক্ত হবে।

ধারা-৪২ঃ স্বত্ব ঘোষনা বা ঘোষনামুলক মামলা। ২টি কারণে স্বত্ব ঘোষনামূলক মামলা করতে হয়ঃ-
(১) স্বত্ব বা আইনগত অধিকার
(২) মর্যাদা বা পদের অধিকার।

ঘোষনামূলক মামলা ৬ বছরের মধ্যে করতে হয়। অর্থাৎ তামাদিকাল ৬ বছর।
ঘোষণামূলক মামলায় কেবলমাত্র প্রতিকার চাইলেই হয় না এর সাথে আনুষাঙ্গিক প্রতিকার চাইতে হয়। আনুসাঙ্গিক প্রতিকার চাওয়া বাধ্যতামূলক। এটা না চাইলে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেবেন।

৪২ ধারার মামলায় ডিক্রি জারীর প্রয়োজন নেই বলে ইহাকে বিজ্ঞাপনী ডিক্রি বলে।

৪২ ধারার মামলায় কোর্ট ফি ফিক্সড ৩০০/- টাকা প্রতিটি ঘোষনার জন্য।

যে কোন আরজিতে সর্বনিু ৩টি প্রতিকার চাইতে হয়।

সরকার দখল পুনরুদ্ধারের মামলা কত বছরের মধ্যে করবে?
(ক) ৬ মাস, (খ) ৬ বছর, (গ) ৬০ বছর, (ঘ) ১৮০ দিন। উত্তরঃ (গ) ৬০ বছর।

ধারা-১২ঃ চুক্তি প্রবল বা বাস্তবায়নের মামলা কার্যকর। (চুক্তি প্রবল বলতেই ধারা-১২)

৪টি ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়ন বা কার্যকর করা যাযঃ-
(১) যে চুক্তি পুরোপুরি বা আংশিক কারো জিম্মায় থাকে সে চুক্তি কার্যকর নয় (১৯৭৩ সালের ৮ নং আইন দ্বারা বাতিল)।
যেমনঃ বাড়ী ভাড়া দিয়ে আরেকজনকে সাবলেট দেওয়া কার্যকর হবে না।

স্বত্বের অধিকারী হতে হবে জিম্মাদারী থেকে চুক্তি করা যায় না।
চুক্তি করতে কি কি লাগে?

(ক) সম্মতি ও (খ) পক্ষদ্বয়।

(২) যখন সম্মতিভুক্ত কার্য সম্পাদন না করলে কার্যত যে ক্ষতি হয় যা কোন কিছুর মানদন্ড দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সে চুক্তিটি কার্যকর। যেমনঃ ভূমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে। (এই ক্ষতি অপূরণীয়)।

(৩) যখন সম্মতিভুক্ত কার্য সম্পাদন না করলে কার্যত যে ক্ষতি হয় তা পুরোপুরি আর্থিক ক্ষতিপুরণ দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়, তাহলে সেই চুক্তিটি কার্যকর। যেমনঃ ছবি, ঐ ছবিটি লাগবে (এই ক্ষতি অপূরণীয় দুষ্পাপ্য)।

(৪) যখন সম্মতিভুক্ত কার্য সম্পাদন না করলে কার্যত যে ক্ষতি হয় তা দ্বারা কোনরূপ আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব নয়, সে চুক্তিটি কার্যকর। যেমনঃ চেক দিল।

প্রশ্ন না বোধক থাকলে উত্তর খুজতে হবে হ্যা বোধক প্রশ্ন হ্যা বোধক থাকলে উত্তর খুজতে হবে নাবোধক্

 ধারা-২১ঃ ৮টি ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়ন করা যায না।
(১) যেখানে আর্থিক ক্ষতিপূরণই যথেষ্ট সেই চুক্তি কার্যকর নয়।
(২) যে চুক্তি সূক্ষè ও পুংখানুপুংখ, জটিল বিবরণীর সমষ্টি এবং ব্যক্তিগত যোগ্যতার উপরে নির্ভর করে। সে চুক্তি কার্যকর নয়। যেমনঃ

  • সূক্ষ্ম ও পুংখানুপুংখ—আসেন চুক্তি করি মূল উদ্দেশ্য কি চুক্তিতে নেই।
  • জটিল বিবরণী—–ডানে যেয়ে বামে নাম বরাবর ঠিকানা।
  • ব্যক্তিগত যোগ্যতা—–কনসোর্ট।

(৩) যে চুক্তির শর্তাবলী আদালত নিশ্চয়তার নির্ণয় করতে পারে না। সেই কার্যকর নয়।

(৪) যে চুক্তি তার প্রকৃতিগত কারণে বাতিলযোগ্য (অবৈধ চুক্তি)।
(৫) জিম্মাদারীর সীমা লংঘন করে চুক্তি করলে সেই চুক্তি কার্যকর নয়।
(৬) কোম্পানীর কর্মকর্তা ক্ষমতা বহির্ভূত চুক্তি করলে।
(৭) ৩ বছরের বেশী সময় ধরে যে চুক্তি কার্য সম্পাদন করে যেতে হয় সে চুক্তি কার্যকর নয়।
(৮) চুক্তির আগেই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ বিলুপ্ত হয়েছে তা কার্যকর নয়।

চুক্তি করতে হয় ৩ বছরের জন্য।
চুক্তি প্রবলের/বাস্তবায়নের মামলা করতে হয় ১ বছরের মধ্যে যা আগে ছিল ৩ বছর।

ধারা-২১(ক)ঃ স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যা করতে হবে। ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে কার্যকর সংশোধনী ২০০৪ সালে। ৩টি ক্ষেত্রঃ
(১) সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামুলক।
(২) সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের পুরোপুরি বা আংশিক দখলে থাকতে হবে।
(৩) সম্পত্তি নিয়ে মামলা করলে সম্পূর্ণ মূল্য জমা দিতে হবে। যেমনঃ ৫ শতাংশ জমির মূল্য ৫ লক্ষ টাকা বায়না করা হলো ২ লক্ষ টাকা। মামলা করার সময় বাকী ৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আর অপর পক্ষকে জমির দলিল জমা দিয়ে মামলা করতে হবে।

ধারা-৩৫ঃ চুক্তি রদ, বাতিল বা প্রত্যাহারের মামলা।
চুক্তি রদ, বাতিল বা প্রত্যাহারের মামলা সব সময় ১ বছরের মধ্যে করতে হবে। ৩ ভাগে বিচার পূর্বক

চুক্তি বাতিল বা রদ করা যায়ঃ-
(১) যে চুক্তিটি বাতিলযোগ্য (অবৈধ+যে চুক্তির কার্যসম্পাদন করা যায় না)
(২) যেখানে আপাতদৃস্টিতে দৃশ্যমান নয়, এমন কারণে চুক্তিটি অবৈধ। বাদীর থেকে বিবাদীর বা প্রতিবাদীর প্রতিষ্ঠানের দোষ বেশী। যেমনঃ বি.ডি ফুড চুক্তি করল জি.এম এর সাথে সবজি নিয়ে কিন্তু বি.ডি ফুড পাঠালেন হেরোইন। এক্ষেত্রে চুক্তি প্রত্যাহার করবে জি.এম.
(৩) যেখানে একটি বিক্রয়, অর্পণ অথবা একটি ইজারা গ্রহনের চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্য সম্পাদনের জন্য ডিক্রি প্রদান করা হয়েছিল এবং ক্রেতা বা ইজারাদারকে ক্রয়মূল্য বা অপরাপর অর্থ পরিশোধ করতে বলে দিল। যেমনঃ ইজারাদার—-মামলা—সরকার—ডিক্রি।

আংশিক চুক্তি বাস্তবায়ন (ধারা-১৩-১৭)
ধারা-১৩ঃ যে চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিলুপ্ত হয়েছে তা বাস্তবায়নযোগ্য।
ক্রেতা বাধ্য বিক্রেতাও বাধ্য চুক্তির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে।

চুক্তি আইন ১৮৭২ এর ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে বিক্রয় চুক্তির সাথে সাথেই অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা বা স্বত্ব ক্রেতার নিকট চলে যায় বা স্থান্তরিত হয় এবং উক্ত সম্পত্তির সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতি ক্রেতাকে বহন করতে হবে।

টি.পি. এ্যাক্ট ১৮৮২ সালের ৫৪ ধারায় স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা বিক্রয় চুক্তির সাথে সাথে স্থান্তরিত হয় না। কেবলমাত্র রেজিষ্ট্রেশন এর পরেই মালিকানা পরিবর্তন হয়।

ধারা-১৪ঃ চুক্তির অংশবিশেষ সুনির্দিষ্টভাবে সম্পাদন। যেখানে অসম্পাদিত অংশ ছোট বা ক্ষুদ্র অর্থাৎ সম্পাদিত অংশ বড়। সম্পাদিত অংশ ১৪ ধারায় বলা আছে। এটি কার্যকর এবং ক্ষতিপূরণ পাবে। ক্রেতা কিনতে বাধ্য নয় বিক্রেতা বিক্রি করতে বাধ্য।

ধারা-১৫ঃ চুক্তির অংশবিশেষ সুনির্দিষ্টভাবে কার্য সম্পাদনে যেখানে অসম্পাদিত অংশ বড় অর্থাৎ সম্পাদিত অংশ ছোট বা ক্ষুদ্র। এটি কার্যকর এবং ক্ষতিপূরন পাবে। ক্রেতা কিনতে বাধ্য নয় বিক্রেতা বিক্রি করতে বাধ্য।

ধারা-১৬ঃ চুক্তির স্বতন্ত্র অংশ বাস্তবায়ন। আলাদা স্থানে সম্পত্তি হলে আসল দলিল হলে ক্রেতা কিনতে বাধ্য বিক্রেতা বিক্রি করতে বাধ্য নয়। নকল দলিল হলে ক্রেতা কিনতে বাধ্য নয় কিন্তু বিক্রেতা বিক্রি করতে বাধ্য। এটি কার্যকর এবং ক্ষতিপূরণ পাবে।

ধারা-১৭ঃ ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ধারা ব্যতিত অন্য কোন আংশিক চুক্তি বাস্তবায়ন যোগ্য নয়।
বড় অংশ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে এবং নকল দলিলের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে কখনই বাধ্য করা যাবে না কিন্তু বিক্রেতা বাধ্য।

ধারা-২৯ঃ চুক্তি বাতিলের মামলায় হেরে গেলে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করা যাবে না।

ধারা-৪১ঃ দলিল বাতিলের মামলায় হেরে গেলে ক্ষতিপূরণের মামলা করা যাবে।
দলিল সম্পর্কিত
ধারা-৩১ঃ ২টি কারণে দলিল সংশোধন করা যায়ঃ- (১) প্রতারনার মাধ্যমে সৃষ্ট দলিল এবং (২) পারস্পরিক ভূল।

পারস্পরিক ভুলঃ ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ একটি গুদাম ক্রয়ের জন্য ‘ঘ’ এর নিকট চুক্তিবদ্ধ হয়। ভুলক্রমে ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ এর ৩টি গুদামই দলিলে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। উক্ত দলিল টি যদি সংশোধন করতে হয় তবে তা পারস্পারিক সমঝোতার মাধ্যমেই সংশোধন করতে হবে।

ধারা-৩৯ঃ দলিল বাতিল, রদ বা প্রত্যাহার।
দলিল বাতিলের মামলা ৩ বছরের মধ্যে করতে হয় (জানার পর থেকে)।
কারো বিরুদ্ধে কোন ভূয়া দলিল তৈরী হলে যে দিন থেকে জানতে পারবে, সেদিন থেকে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি ৩ বছরের মধ্যে মামলা করবে।

দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে দলিলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-
(১) বাতিল দলিল—-রেজিষ্ট্রিকৃত ভূয়া দলিলকে বাতিল দলিল বলে।
(২) বাতিলযোগ্য দলিলÑÑÑঅরেজিষ্ট্রিকৃত ভূয়া দলিলকে বাতিলযোগ্য দলিল বলে।
বাতিল দলিলের ক্ষেত্রে জানার পর ৩ বছরের মধ্যে ৩৯ ধারাতে দলিল বাতিলের মামলা করতে হয়।
বাতিলযোগ্য দলিলের ক্ষেত্রে ৬ বছরের মধ্যে ৪২ ধারাতে মামলা করতে হয়।

উদারহণঃ একটি জাহাজের মালিক কমল সাহেব প্রতারনামূলক ভাবে জাহাজটিকে সমুদ্র যাত্রার উপযুক্ত বলে মনে করে এবং একজন দায়গ্রাহক সিরাজ সাহেবকে উক্ত জাহাজের বীমা পলিসি করতে প্রবৃত্ত করতে/ উৎসাহিত করে। উক্ত বীমা পলিসি থেকে সিরাজ সাহেব কত ধারা থেকে অব্যাহতি পেতে পারে বা কি আইনী প্রতিকার পেতে পারে?
(ক) ৩১ ধারা, (খ) ৪২ ধরা, (গ) ৩৯ ধারা, (ঘ) ৪০ ধারা। উত্তরঃ (গ) ৩৯ ধারা।

দলিল বাতিলের মামলা ৩৯ ধারায় করতে হয়।

একটি অরেজিষ্ট্রিকৃত দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে কত ধারা মামলা করতে হবে?
(ক) ৩১ ধারা, (খ) ৪২ ধরা, (গ) ৩৯ ধারা, (ঘ) ৪০ ধারা। উত্তরঃ (খ) ৪২ ধারা।
দলিল বাতিলযোগ্য হলে ৪২ ধারায় ঘোষনামূলক মামলা করতে হয়।

ধারা-৪০ঃ আংশিক দলিল বাতিলের কথা বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয়, তুচ্ছ, বিভ্রান্তিকর, অস্পষ্ট, শব্দ, দলিল থেকে বাতিলের ক্ষেত্রে বাদ দিতে চাইলে ৪০ ধারায় মামলা করতে হয়।

ধারা-৪৪ঃ রিসিভারঃ আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে রিসিভার নিয়োগ করেন। আদালত চাইলে কালেক্টরেট রিসিভার করতে পারেন। রিসিভারের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেন আদালত।

দেওয়ানী কার্যবিধি আদেশ ৪০ বিধি-১ এ রিসিভার নিয়োগের আবেদন করতে হয়।
আদালত বিরোধীয় সম্পত্তি ও ক্রোককৃত সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।

৪৫-৫১ ধারা বিলুপ্ত।  ১৯৭৩ সনের ৮নং আইন দ্বারা বিলুপ্ত করা হয়।

নিষেধাজ্ঞাঃ
নিষেধাজ্ঞা অর্থ স্থিতিবস্থা বজায় রাখা বা বারিত করা।
কোন কিছু করা বা না করা থেকে বিরত রাখা/ বারিত রাখা হলে তা নিরোধক প্রতিকারের মাধ্যমে মঞ্জুর করা হয়।

দেওয়ানী কার্য্যবিধিতে নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকারঃ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকার।
নিরোধক প্রতিকার ২ প্রকার।

দেওয়ানী কার্য্যবিধিতে নিষেধাজ্ঞাঃ

(১) তাৎক্ষনিক সমাধানের জন্য নোটিশজারী ব্যতিত স্বল্প সময়ের জন্য আদালত যে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন তাকে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বলে। অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞায় বিবাদীকে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন নাই।
(২) অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার জারীর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অবশ্যই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে হবে।
(৩) স্থায়ী বা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাঃ মামলার গুনাগুন যাচাই করে ডিক্রির মাধ্যমে প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়।

অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে হয় দরখাস্তের মাধ্যমে এবং চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে হয় মামলার করে বা আরজির মাধ্যমে।

ধারা-৬ঃ নিরোধক প্রতিকারঃ যেটি করতে আদালত নিষেধ করে বা বিরত রাখার জন্য যে প্রতিকার মঞ্জুর করে তাকে নিরোধক প্রতিকার বলে।

ধারা-৫২ঃ নিরোধক প্রতিকার ২ প্রকার বা ২ ভাবে মঞ্জুর করা যায়ঃ
(১) অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। (২) স্থায়ী বা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে।

ধারা-৫৩ তে অস্থায়ী ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সর্বদাই দেওয়ানী কার্যবিধিকে অনুসরণ করবে। আদেশ ৩৯ বিধি মতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে হয়।

মামলার আরজি দায়েরের পর মামলার গুনাগুন বিশ্লেষণ করে ………………… এর ফলাফল হয় ডিক্রি।

ধারা-৫৪ঃ ৫৪ ধারায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করতে হয়।

ধারা-৫৫ঃ বাধ্যতামূলক বা আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা। বাধ্যবাধাকতা শব্দ ব্যতিত বাধ্যতামূলক বা আদেশমূলক নিষেধাজ্ঞা হয় না। (এ ধরনের প্রশ্নে সর্বদাই ইট বালু, সিমেন্ট শব্দগুলো জড়িত থাকে)
বাধ্যশতামূলক নিষেধাজ্ঞাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বলে।

ইহা এমন এক নিষেধাজ্ঞা যা দ্বারা আদালত বিবাদীকে কোন বাধ্যবাধকতা ভঙ্গ রোধকল্পে একটি নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে বাধ্য করে।

করিম একটি বাড়ী নির্মাণ করল যার প্রান্তভাগ শাহরুখ এর জমির উপর পড়েছে। শাহরুখ উক্ত বাড়ীটি ভেঙ্গে ফেলতে আদালতের নিকট কত ধারায় প্রতিকার চাইতে পারে?

(ক) ৫৩ ধারা, (খ) ৫৪ ধারা, (গ) ৫৫ ধারা, (ঘ) ৫৬ ধারা। উত্তরঃ (গ) ৫৫ ধারা।

নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকারঃ

(ক) অস্থায়ী (মামলাভুক্ত+বর্তমান+ভবিষ্যৎ);

(খ) স্থায়ী (মামলা ভুক্ত নয়+ বর্তমান + ভবিষ্যৎ);

(গ) বাধ্যতামূলক (মামলাভুক্ত নয়+অতীত)।

রাসেল আমিনকে একটি নির্দিষ্ট জমি ভাড়া দেয় এবং আমিন সেখান থেকে বালি বা নুরি পাথর উত্তোলন করবে না মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়। আমিন বালি বা নূড়ি পাথর উত্তোলন করলে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাইতে হবে।
(ক) অস্থায়ী, (খ) স্থায়ী, (গ) বাধ্যতামূলক, (ঘ) কোনটিই নয়।

উত্তরঃ (খ) স্থায়ী।

ধারা-৫৭ঃ চুক্তির নাবোধক অংশ বাস্তবায়ন বা কার্য সম্পাদন

উহাহরণঃ কমল সাহেব ১৬/০৬/২০১৬ ইং তারিখে ১০,০০০/- টাকা চুক্তিতে নাদিম সাহেবের বাসায় গান গাইতে যাবেন বলে চুক্তি করেন। আবার ঠিক ঐ দিনই ঐ সময়ে সিরাজ সাহেবের বাসায় গান গাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেন। এক্ষেত্রে কমল সাহেব যদি কারো কাছেই গান গাইতে না চায় সেক্ষেত্রে তাকে বাধ্য করা যাবে না ২১(২) ধারায়। কেননা যে চুক্তি ব্যক্তিগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

ধারা-৫৬ঃ ১১টি ক্ষেত্রে আদালত নিরোধক প্রতিকার মঞ্জুর করেন না বা নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন না।
(১) বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম বন্ধের ক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন না।
(২) আদালতের এখতিয়ার না থাকলে নিষেধাজ্ঞার মঞ্জুর করবেন না।
(৩) আইন প্রনয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা থেকে বিরত রাখার জন্য নিষেধাজ্ঞার মঞ্জুর করবে না।
(৪) সরকারী বা বিদেশী সরকারী কার্যক্রম বন্ধের জন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন না।
(৫) ফৌজদারী কার্যক্রম স্থগিতের জন্য আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন না।
(৬) যে চুক্তি সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় না এরূপ চুক্তিভঙ্গের নিরোধের জন্য।
(৭) উৎপাতের অজুহাতে উৎখাত করা যাবে না সেক্ষেত্রে আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন না।
(৮) যেক্ষেত্রে বিবাদীর মৌন সম্মতি ছিল।
(৯) অন্য আইনে যদি প্রতিকার পাওয়া যায়।
(১০)এমন আচরন যা অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
(১১) যেক্ষেত্রে বাদীর কোন স্বার্থ নাই।