বার কাউন্সিল পরিক্ষার্থীদের জন্য “তামাদি আইন” ১৯০৮ এর সারকথা

তামাদি আইন-১৯০৮

শিরোনামঃ

  • তামাদি আইনের প্রবক্তা লর্ড কর্নওয়ালিশ। উপমহাদেশে তামাদি আইন সর্বপ্রথম প্রবর্তন হয় ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ এর মাধ্যমে সূর্যাস্ত আইন দ্বারা।
  • সর্ব প্রথম আইনে পরিণত হয় ১৮৫৯।
  • সর্বপ্রথম তামাদি আইন কার্যকর হয় ১৮৬২ সালে।
  • বর্তমানে বাংলাদেশে প্রযোজ্য তামাদি আইন ১৯০৮ সালের ৯নং আইন। ৭ইং আগস্ট ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয়। যা ১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে কার্যকর।
  • তামাদি আইন সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৪ সালে। যা ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে কার্যকর।
  • তামাদি অর্থ কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া বা বাধাগ্রস্থ হওয়া বা বারিত হওয়া। তামাদি একটি আরবি শব্দ।

তামাদি আইন বিধিবদ্ধ আইন। যদি বিধিবদ্ধ না থাকে তাহলে পদ্ধতিগত আইন।

  • যেহেতু তামাদি আইন একটি বিধিবদ্ধ আইন, সেহেতু তামাদি আইন একটি সম্পূর্ণ আইন বা পরিপূর্ণ আইন।
  • তামাদি আইনের ধারা আছে ২৯টি। তপসিল আছে ৩টি। ১ম তফসিলে অনুচ্ছেদ আছে ১৮৩টি। ২য় ও ৩য় তফসিল বিলুপ্ত।

তামাদি আইনের সংজ্ঞাঃ

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবী আদায় ও স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে উক্ত স্বত্বাধিকার যে আইন দ্বারা নষ্ট হয়েছে বলে বিবেচিত হয় তাকে তামাদি আইন বলে।

প্রযোজ্য ও অপ্রযোজ্যঃ তামাদি কেবলমাত্র দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ২ ধারা মোতাবেক তামাদি আইনে মামলা উল্লেখ থাকলে তা অবশ্যই দেওয়ানী মামলাকে বুঝাবে। অর্থাৎ তামাদি ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

তামাদি আইন দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় প্রকার দরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ ফৌজদারী দরখাস্তে তামাদি প্রযোজ্য হলেও মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সংজ্ঞা সমূহ-ধারা-২ঃ নিম্ন লিখিত সংজ্ঞা সমূহের নিম্ন লিখিত অর্থ হবেঃ

  • দরখাস্ত বলতে দরখাস্তকারীকে বুঝাবে। অর্থাৎ দরখাস্তকারী যে আবেদন করে তাকে দরখাস্ত বলে। হুন্ডি বা চেককে বিনিময় পত্র বা বরাত চিঠি বলে।
  • যার বিরুদ্ধে মামলার দায় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তাকে বিবাদী বলে। যে ব্যক্তি মামলার দায় দায়িত্ব অর্জন করেছেন তাকে বাদী বলে।
  • কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির স্বত্ত্বাধীন কোন অংশ বা তার ফসল নিজের লাভের জন্য অপসারন বা ব্যবহার করতে যে অধিকার অর্জন করেন তাকে ব্যবহারিক স্বত্ত্ব বলে।
  • ব্যবহারিক স্বত্ত্ব কোন চুক্তি দ্বারা উদ্ভব হয় না।
  • যে দলিল দ্বারা নির্দিষ্ট অংকের টাকা একজন অন্যজনকে চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকবেন তাকে অঙ্গীকারপত্র বলে।
  • মামলা বলতে আপীল বা দরখাস্তকারীকে বুঝাবে না।
  • অছি বলতে বেনামদার ঋণ পরিশোধের পরে দখলকারী বা বন্ধক গ্রহীতা বা স্বত্ত্বহীন ব্যক্তিকে বোঝাবে না।
  • যার স্বত্ত্ব আছে তাকে অছি বলে।
  • মুচলেকা বা খতঃ কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে শর্ত জুড়ে দেয় যে, নির্দিষ্ট কোন কার্য ঘটলে বা না ঘটলে অঙ্গীকার নামাটি বাতিল হয়ে যাবে বলে গণ্য হয়। একে মুচলেকা বা খত্ বলে।

সর্বশেষ সংশোধনঃ তামাদি আইনের ১১৩ এবং ১১৪ নং অনুচ্ছেদ এর ২০০৪ সালে সংশোধন করা হয়।

অনুচ্ছেদ-১১৩ঃ চুক্তি প্রবল বা বাস্তবায়নের মামলার তামাদিকাল আগে ছিল ৩ বছর বর্তমানে ১ বছর।

অনুচ্ছেদ-১১৪ঃ চুক্তি রদ, প্রত্যাহার বা বাতিলের মামলার তামাদিকাল আগে ছিল ৩ বছর বর্তমানে ১ বছর। যাহা ১লা জুলাই ২০০৫ থেকে কার্যকর।

তামাদি কাল শুরু হয় মামলার কারণ থেকে বা কজ অব এ্যাকশন থেকে। 

ধারা-১২ঃ তামাদি গণনা হয় প্রথম দিনটি বাদ দিয়ে।

  • অর্থাৎ রায় ঘোষণা, দন্ডাদেশ, রিভিউ, রিভিশন ইত্যাদি দরখাস্তের প্রথম দিনটি বাদ দিয়ে তামাদি গণনা করতে হয়।
  • নকল উঠাতে যে দিনগুলো লাগবে সেই দনিগুলো বাদ দিয়ে তামাদি গণনা করতে হয়।
  • রোয়েদাদ এর নকল উঠাতে যে দিন লাগে তা তামাদি গণনা থেকে বাদ যাবে।
  • বিবাদী যদি তামাদির প্রশ্ন উত্থাপন নাও করে তবুও আদালত তামাদি আইন মানতে বাধ্য। অর্থাৎ এটি বাদীর আইনগত অধিকার।

প্রশ্নঃ তামাদি গণনা শুরু হয় কবে থেকে?

(ক) কজ অব এ্যাকশন থেকে,  (খ) মামলার কারণ থেকে, (গ) প্রথম দিনটি বাদ দিয়ে, (ঘ) পরের দিনটি থেকে।

উঃ (গ) প্রথম দিনটি বাদ দিয়ে।

প্রশ্নঃ তামাদিকাল শুরু হয় কবে থেকে?

(ক) কজ অব এ্যাকশন থেকে, (খ) মামলার কারণ থেকে, (গ) প্রথম দিনটি বাদ দিয়ে, (ঘ) পরের দিনটি থেকে।

উঃ (খ) মামলার কারণ থেকে।

টেকনিকঃ বাংলা ও ইংরেজি নিয়ে সংঘর্ষ তৈরী হলে বাংলা গ্রহণ যোগ্য হবে।

ধারা-২৫ঃ তামাদির সময় গণনা করা হয় গ্রেগরিয়ান বর্ষ পঞ্জিকা বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে।

প্রশ্নঃ নিতাই বাবু বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১টি দলিল সম্পাদন করেন। উক্ত দলিলের তামাদি কোন পঞ্জিকা অনুসারে গণনা করা হবে?

(ক) ইংরেজী, (খ) বাংলা, (গ) গ্রেগরিয়ান, (ঘ) হিজরী।

উঃ (গ) গ্রেগরিয়ান।

প্রশ্নঃ নিতাই বাবু বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে ১টি দলিল সম্পাদন করেন। উক্ত দলিলের তামাদি কোন ক্যালেন্ডার অনুসারে করা হবে?

(ক) ইংরেজী, (খ) বাংলা, (গ) গ্রেগরিয়ান, (ঘ) হিজরী।

উঃ (ক) ইংরেজী।

ধারা-৩ঃ তামাদি অন্তে মামলা ইত্যাদি খারিজ। অর্থাৎ তামাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মূল মামলা দায়ের করা যাবে না। (নোটঃ মামলা বলতে শুধুমাত্র দেওয়ানী মামলাকে বুঝাবে। ধারা-২)

ধারা ৩ মামলা ও দরখাস্ত উভয়ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ আপীল, রিভিউ, রিভিশনের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে দরখাস্ত দাখিল করা যাবে না। (ব্যতিক্রম ব্যতিত)

ধারা-৪ঃ আদালত যদি বন্ধ থাকে এবং এ কারণে যদি তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তবে আদালত খোলার দিন বা প্রথম কার্যদিবসে উক্ত মামলাটি দায়ের করা যাবে। বিচারক ছুটিতে থাকলে আদালত বন্ধ বলে ধরে নিতে হবে।

কোর্টের দরজা জানালা বন্ধ মানে আদালত বন্ধ নয়।

এই ধারাটি মামলা ও দরখাস্ত উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ধারা-৫ঃ বিলম্ব মার্জনা বা বিলম্ব মওকুফ।

৫ ধারা শুধুমাত্র দরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মামলার ক্ষেত্রে নয়। কেউ সঠিক সময়ের মধ্যে বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দরখাস্ত দায়ের করতে না পারলে যথেষ্ট কারণ দেখিয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আদালত আর ইচ্ছাধীন, স্বেচ্ছাধীন বা স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতাবলে বিলম্ব মার্জনা বা বিলম্ব মওকুফ করতে পারেন।

যথেষ্ট কারনগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণঃ

(১) অসুস্থতা (মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকতে হবে গুরুত্বর ও মারাতক)

(২) সরল বিশ্বাসে ভুল।

(৩) কারাবাস।

(৪) কৌশুলীর ভুল (কৌশুলী বলতে তার মহুরী, কেরানী, ভৃত্য বা চাকর ও দোভাষী অন্তর্ভূক্ত হবে)।

(৫) আদালতের সংঘাতপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

(৬) রায় ডিক্রির নকল তুলতে আদালতের কর্মচারীর ভূল।

(৭) দারিদ্রতা।

(৮) আদালতের অবহেলা এবং পর্দানশীল মহিলা।

ধারা-৬ঃ বৈধ অপারগতা বা বৈধ অক্ষমতাঃ এই ধারাটি শুধুমাত্র মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ৬ ধারাটি ৩ ব্যাক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যথাঃ

(১) নাবালক বা মাইনর,

(২) মানসিক বিকারগ্রস্থ এবং

(৩) জড়বুদ্ধি সম্পন্ন বা অপ্রতিগ্রস্থ বা পাগল, উম্মাদ, মাস্তান, বাতুল।

কোন ব্যক্তি বৈধ অপারগতা থাকাবস্থায় মামলা করার অধিকারী হলে উক্ত কারনে মামলার তামাদিকাল শেষ হয়ে গেলে বৈধ অপারগতা বা অক্ষমতা অবসানের পর তিনি নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবেন।

ধারা-৭ঃ কতিপয় বিবাদী বা দরখাস্তকারীর আইনগত অক্ষমতা। অঅংশীদারিত্ব ব্যবসা অ ই ঈ মানসিক অ, ই, ঈ তিনজন একটি ফার্মের মালিক। ঋ তাদের ফার্মের নিকট টাকা পায়। ঈ মানসিক বিকারগ্রস্থ। এক্ষেত্রে যদি ঈ এর অনুমতি ব্যতিত ঋণমুক্ত করা যায় তবে ঈ সহ সকলের বিরুদ্ধে তামাদিকাল চলবে। আর যদি ঈ এর অনুতি ব্যতিত ঋণ মুক্ত না করা যায় তাহলে ঈ এর অপারগতা অ ও ই এর উপর বর্তায় যদিও তারা সুস্থ্য। অর্থাৎ সকলের বিরুদ্ধে তামাদিকাল স্থগিত থাকবে।

ধারা-৮ঃ বিশেষ পার্থক্য। ৮ ধারা পড়তে হলে ৬ ধারাকে মিলিয়ে পড়তে হবে। ৮ ধারাটি তামাদি কাল শেষ হয়ে যাওয়ার আগে ও পরে প্রযোজ্য। বৈধ অপারগতা থাকাবস্থায় মামলার তামাদি শেষ হলেঃ

যে মামলার তামাদিকাল ৩ বছর বা ৩ বছরের উর্দ্ধে বৈধ অপারগতার কারণে উক্ত মামলার তামাদিকাল শেষ হয়ে গেলে ঐ মামলা করার জন্য যে দিন থেকে বৈধ অপারগতার অবসান ঘটে সে দিন থেকে সময় পাওয়ার যাবে ৩ বছর।

যে মামলার তামাদিকাল ৩ বছরের নীচে যেক্ষেত্রে বৈধ অপারগতা বা অক্ষমতা বিলুপ্তির পর সময় পাওয়া যাবে যা আছে তাই।

মনে রাখা প্রয়োজনঃ অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশনের মামলার ক্ষেত্রে ৮ ধারা প্রযোজ্য নয়। ৮ ধারাটি শিশুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মামলার তামাদি কাল থাকাবস্থায় বৈধ অপারগতা শেষ হলেঃ উদাহরণঃ মিরাস বা বংশগত পদ পুনঃরুদ্ধারের জন্য একজন নাবালক মামলা করার অধিকারী হয়। উক্ত নাবালক মামলার তামাদি শেষ হয়ে যাওয়ার ১০ বছরের সময় সাবালকত্ব অর্জন করে। স্বাভাবিক নিয়মে উক্ত সাবালক মামলা করার জন্য ২ বছর সময় পাবে। ৮ ধারার বিশেষ পার্থক্য অনুযায়ী সে আরও ১ বছর অতিরিক্ত সময় পাবে। অর্থাৎ নাবালক সাবালকত্ব অর্জনের ৩ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে পারবে।

প্রশ্নঃ মিরাসের অধিকারের জন্য একজন নাবালক মামলা করার অধিকারী হয়। মামলার তামাদি ১০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর উক্ত নাবালক সাবালকত্ব অর্জন করে। উক্ত সাবালক মামলা করার জন্য কত বছর অতিরিক্ত সময় পাবে?

(ক) ৩ বছর, (খ) ২ বছর, (গ) ১ বছর, (ঘ) কোনটিই নয়।

উঃ (গ) ১ বছর।

নাবালক মামলা করার জন্য সময় পাবে ৩ বছর।

নাবালক স্বাভাবিক নিয়মে সময় পাবে ২ বছর এবং অতিরিক্ত ১ বছর।

যদি ৮ বছরের মাথায় সাবালক হত তাহলে সময় পেত স্বাভাবিক নিয়মে ৪ বছর (অতিরিক্ত সময় এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)।

ধারা-৯ঃ সময়ের অবিরাম চলন বা অবিরাম গণনা।

তামাদি একবার শুরু হলে তা কোন বৈধ অপারগতা বা অক্ষমতা দিয়ে রোধ করা যায় না। অর্থাৎ তামাদি একবার শুরু হলে তা আর থামে না।

তবে শর্ত থাকে যে, পাওনারকে দেনাদার সম্পত্তি পরিচালনার হলফনামা প্রদান করলে ঐ পরিচালনা অব্যহৃত থাকাবস্থায় ঋণ উসুলের নিমিত্তে তামাদি মূলতবী থাকবে।

ধারা-৯ঃ তামাদি একবার শুরু করলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত থামে না।

ধারা-৩ঃ এক বার থামলে তা আর চলে না।

ধারা-১০ঃ প্রকাশ্য অছি বা ট্রাস্টি বা তাদের প্রতিনিধি বা তাদের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে তামাদি আইন প্রযোজ্য নয়।

বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের ক্ষেত্রে তামাদি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দেনমোহরের ক্ষেত্রে তামাদি প্রযোজ্য। দেনমোহরের টাকা ৩ বছরের মধ্যে আদায় করতে হয়।

ধারা-১৩ঃ এই ধারাটি শুধুমাত্র বিবাদীর বৈধ অপারগতাকে নির্দেশ করে। ১৩ ধারাটি শুধুমাত্র বিবাদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিবাদী চাইলে দেশের বাইরে থাকলে সে সময়টুকু তামাদি থেকে বাদ যাবে।

এই ধারাটি বিবাদীর বৈধ অক্ষমতাকে নির্দেশ করে। এটি লিখিত জবাব ও দরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ধারা-১৪ঃ ভুল আদালতে বা এখতিয়ারবিহীন আদালতে সদদুদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করলে যে সময় কালক্ষেপন হয় তা তামাদি গণনা হতে বাদ যাবে। অর্থাৎ ভুল আদালতে মামলা দায়েরের কারণে নতুন মামলার ক্ষেত্রে ১৪ ধারায় বিলম্ব মার্জনার আবেদন করতে হয়।

ধারা-১৫ঃ আদালতের কার্যাবস্থা স্থগিত বা নিষেধাজ্ঞা থাকলে ঐ সময়কাল তামাদি গণনা থেকে বাদ দিতে হবে।

ধারা-১৭ঃ জীবিত অবস্থায় যে ব্যক্তি মামলার অধিকারী ছিল না কিন্তু মৃত্যুর পরে মামলার অধিকার জন্মালে তার প্রতিনিধিদের উপরে তামাদি গণনা চলবে।

ধারা-১৮ঃ প্রতারনার ফলঃ উক্ত ধারাটি মৌখিক ও লিখিত দুই ধরনের প্রতারনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ধারাটি একতরফা ডিক্রি রদের ক্ষেত্রে বেশী ব্যবহার করা হয়।

মৌখিক প্রতারনার ক্ষেত্রে তামাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে ধারাটি প্রযোজ্য এবং লিখিত প্রতারনার ক্ষেত্রে তামাদি শেষ হওয়ার পরে ধারাটি প্রযোজ্য।

প্রতারনার মাধ্যমে যদি কাউকে মামলা থেকে বিরত রাখা হয় তবে যেদিন থেকে প্রতারনা ধরা পড়বে সে দিন থেকে তামাদিকাল শুরু হবে।

ধারা-১৯ঃ লিখিত ভাবে স্বীকারোক্তির আইনগত ফলাফল বা প্রাপ্তী স্বীকারঃ

টাকা দেওয়ার স্বীকৃতি পত্রকে প্রাপ্তী স্বীকার বলে। উক্ত ধারাটি তামাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে প্রযোজ্য। বারবার অস্বীকার করার পর তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে দায়-গ্রহীতা লিখিত আকারে দাবী স্বীকার করে নিলে এবং স্বাক্ষর করলে যেদিন থেকে উক্ত প্রাপ্তি স্বীকার করা হয় সে দিন থেকে তামাদির মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পায়।

মনে রাখা প্রয়োজনঃ তামাদির মেয়াদ উর্ত্তীণ হলে উক্ত ধারাটি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ ৩ বছরের বেশী সময় পর হলে দেনাদার এই ধারার আওতায় পড়ে না। প্রাপ্তী স্বীকার অবশ্যই লিখিত ও স্বাক্ষরিত হতে হবে। এবং তারিখ দিতে হবে। যদি তারিখ দেওয়া না থাকে তবে তারিখ বিষয়ে মৌখিক বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাবে তবে অবশ্যই বিষয়বস্তু সম্পর্কে নয়।

ধারা-২০ঃ উত্তর দায় সংক্রান্ত ঋণ পরিশোধের বা সুদ প্রদানের/পরিশোধের ফলাফল। ধারাটি তামাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পূর্বে প্রযোজ্য।

২০ ধারাতে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হয়ঃ-

(১) সুদের কথা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।

(২) তামাদি শেষ হওয়ার পূর্বে দেনার অংশ পূরণ করতে হবে।

(৩) দেনাদার বা তার এজেন্ট কর্তৃক তা পরিশোধ করতে হবে এবং পাওনাদার বা তার প্রতিনিধিকে এবং স্বীকৃতি পত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।

বন্ধকী জমির ফসল প্রাপ্তীর রশিদ, দেনা পরিশোধের সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পুর্বে দেনাদার বা প্রতিনিধি কিছু অর্থ পাওনাদার বা তার প্রতিনিধিকে দেনার স্বীকৃতি সরূপ পরিশোধ করে এবং এতে স্বাক্ষর ও তারিখ দেয়। যে দিন থেকে উক্ত দেনা পরিশোধ করা হয়েছে সে দিন থেকে তামাদির মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ টাকা দেওয়ার তারিখ হতে ৩ বছর।

ধারা-২১ঃ অক্ষম ব্যক্তির প্রতিনিধির উপর তামাদি গণনা।

ধারা-২২ঃ যে দিন যিনি মামলায় পক্ষভুক্ত হন সে দিন তিনি মামলা করেছেন বলে ধরে নিতে হবে। যে কোন সময় মামলার পক্ষভূক্তির আবেদন করা হয়। অর্থাৎ ২য় আপীলেও পক্ষভূক্তির আবেদন করা যায়। পক্ষভূক্তির আবেদন সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ও উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

ধারা-২৩ঃ অব্যাহত চুক্তিভঙ্গ বা অনিষ্ট করাঃ

যে মামলার কারণ একবার ঘটে সেক্ষেত্রে এ ধারাটি প্রযোজ্য নয়। যে কাজের ফলে প্রতি মুহুর্তে বা বারবার মামলার কারণ ঘটে। সেক্ষেত্রে যতবার মামলার কারণ ঘটে ততবার নতুন করে মামলার তামাদিকাল বৃদ্ধি পায়। উদাহরনঃ জনৈক সন্ত্রাসী হাছান মীর ১৩/০৫/২০১৪ ইং তারিখে জনাব শাকিলকে বাড়ী ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান করে, ১৫/৭/২০১৪ ইং তারিখে পুনরায় হুমকি প্রদান করে এবং ০১/০১/১৫ ইং তারিখে বাড়ী ছাড়ার জন্য পুনরায় হুমকি প্রদান করে। এক্ষেত্রে যতবার মামলার কারণ ঘটেছে ততবার তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে।

অবিরাম অন্যায় বা চুক্তিভঙ্গ সুখাধিকার আইনের ক্ষেত্রে বেশী প্রয়োগ করা হয়।

যতবার নালিশের কারণ উদ্ভব হয় ততবার তামাদির মেয়াদ নতুন করে বৃদ্ধি পায়।

ধারা-২৪ঃ যে কাজের দ্বারা নির্দিষ্ট কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু কাজের ফলস্বরূপ ক্ষতি সাধিত হয়। যেদিন থেকে প্রকৃত ক্ষতিটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেদিন থেকে তামাদির মেয়াদ গণনা করতে হবে। উদাহারনঃ একটি জমির ভূ-পৃষ্ঠের মালিক হলেন ‘ক’ এবং ভু-তলের মালিক ‘খ’। ১৩/০৬/১৯৭০ সালে ‘খ’ ভূ-তল হতে কয়লা উত্তোলন করে। উক্ত কাজের ফলস্বরূপ ১৫/৬/২০১৬ তারিখে ১টি ভূমিধস হয়। যে দিন মামলার কারণ ঘটবে এবং সে দিন থেকে মামলার তামাদি গণনা শুরু হবে।

ধারা-২(৫)ঃ সুখাধিকারের সংজ্ঞা তামাদি আইনের ২(৫) ধারা দেওয়া হয়েছে।

সুখাধিকারঃ সুখাধিকার বা পথাধিকার বলতে এমন একটি অধিকারকে বুঝায় যা কোন চুক্তি হতে সৃষ্টি নয় অথবা এর দ্বারা একজন লোক অন্য একজনের মালিকানা ভুক্ত কোন জমির ১টি অংশ হতে কিংবা অপর একজনের জমিতে জন্মেছে কিংবা অবস্থান করেছে এমন কিছু ব্যবহারের জন্য আইনত অধিকার। (ঠ.ঠ.ও)

ধারা-২৬ঃ সুখাধিকার অর্জনঃ এই ধারাটি একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

যেখানে কোন আলো, বাতাস, পানি, পথ ব্যবহার সুখাধিকার হিসেবে কোন বাধা ছাড়া ২০ বছর শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করা হয় তা নিরংকুশ ও অলঙ্ঘনীয় অধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে।

নোটঃ এই ২০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ তামাদি শেষ হওয়ার আগে জমির মালিক বাধা দিলে নতুন করে তামাদির মেয়াদ বৃদ্ধি পায়।

সরকারী জমির ক্ষেত্রে ২০ বছরের স্থলে ৬০ বছর পড়তে হয়।  সরকার ৬০ বছরের মধ্যে জমির দখল পুনঃরুদ্ধরের মামলা করবে এবং ব্যক্তিগত জমির ক্ষেত্রে ২০ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

উপরোক্ত নিয়মে অর্থাৎ ২০ অথবা ৬০ বছর যারা ভোগ দখল করছেন তারা স্বত্ব অর্জনের ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বত্ব অর্জন করতে সময় লাগেÑব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং সরকারী সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৬০ বছর। (যে দিন থেকে মামলার কারণ ঘটে সে দিন থেকে ২ বছর) অর্থাৎ (২০+২) = ২২ নয় এবং (৬০+২) = ৬২ নয়।

স্বত্ব অর্জনের পর মামলার কারণ ঘটলে ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়।

সরকার দখল পুনরুদ্ধারের মামলা কত বছরের মধ্যে করতে পারে? উত্তর-৬০ বছর।

সরকারের বিরুদ্ধে দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করা যায় না।

ধারা-২৮ঃ সম্পত্তির বা জবর দখল বা স্বত্ব বিলুপ্তির বা স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব ঘোষণার মামলা ১২ বছরের মধ্যে করতে হয়। অর্থাৎ কোন সম্পত্তিতে ১২ বছর ধরে দখলে রাখলে জবর দখলকারীর স্বত্ব পাকা হয়। এবং মূল মালিকের স্বত্ব নষ্ট হয়।

ধারা-২৯ঃ বিশেষ ব্যতিক্রম। (ধারা-৮ বিশেষ পার্থক্য)

যে সকল ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযোজ্য নয়ঃ-

(১) বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৬৯

(২) বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪

(৩) অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩

(৪) চুক্তি আইনের ২৫ ধারা

(৫) সুখাধিকার আইন ১৮৮২ মনে রাখা প্রয়োজন ৮ ধারার ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় প্রযোজ্য নয়। উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ২১ ধারা প্রযোজ্য নয়।

মনে রাখা প্রয়োজন ৮ ধারার ক্ষেত্রে প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় প্রযোজ্য নয়। উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ২১ ধারা প্রযোজ্য নয়।

অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত টেকনিকঃ

চুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্য্যরে তামাদি কাল ১ বছর রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত চুক্তি ব্যতিত। টাকা সংক্রান্ত ও এদের সাথে জড়িত ব্যক্তি যাবতীয় কার্য্যরে তামাদি কাল ৩ বছর। অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার তামাদি কাল ১ বছর। স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার তামাদি কাল ৩ বছর। দলিল সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার তামাদি কাল ৩ বছর। হিন্দু সংক্রান্ত ও স্থাবর স্বত্ব সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলার তামাদি কাল ১২ বছর। স্বত্ব সংক্রান্ত এবং যে মামলা মামলার তামাদি নাই তার তামাদি কাল ৬ বছর।

অনুচ্ছেদ-২ঃ ক্ষতি সাধনের মামলার তামাদিকাল ৩ মাস বা ৯০ দিন। (সর্ব নিু মামলার তামাদিকাল)।  অনুচ্ছেদ-৩ঃ স্বাবর সম্পত্তির দখল পুনঃরুদ্ধারের মামলার তামাদিকাল ৬ মাস বা ১৮০ দিন।

  • সরকারী চাকুরী থেকে বরখাস্ত হলে মামলার তামাদিকাল ১ বছর।
  • অন্যায় কারা ভোগের ফলে ক্ষতিপূরনের মামলার তামাদিকাল ১ বছর বা ৩৬৫ দিন।
  • (অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ ২ অনুচ্ছেদ ব্যতিত ১ বছর বা ৩৬৫ দিন)।
  • মানহানির কারণে ১ বছর।
  • অন্যায় কারাভোগ ১ বছর।

স্থাবর সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ বেশিরবাগ সময় ৩ বছর

স্থাবর সম্পত্তি বলতে জমি, পানি, বাড়ী, জমির ফসল, জমির খাজনা, জমির বার্ষিক মুনাফা ইত্যাদি।

স্থাবর সম্পত্তিতে অনধিকার প্রবেশের ক্ষতিপুরনের মামলার তামাদিকাল ৩ বছর।

অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার তামাদিকাল ৩ বছর।

(পাওনাদার, দেনাদার, ঋণগ্রহীতা, খরচ, খচর এর সাথে জড়িত ব্যক্তিগণ, হিসাব স্থাবর সম্পত্তি ৩ বছর।

  • দলিল বাতিলের মামলার তামাদিকাল ৩ বছর ( যে দিন থেকে জানা যাবে)
  • ভূলের জন্য প্রতিকার লাভের মামলার তামাদিকাল ৩ বছর।
  • লিখিত ও রেজিষ্ট্রিকৃত চুক্তিভঙ্গের জন্য ক্ষতিপূরণের মামলার তামাদিকাল ৬ বছর।
  • লীজের শর্ত ব্যতিত গাছ কেটে ফেললে লীজ দাতা মামলা করবেন ৩ বছরের মধ্যে।

অনুচ্ছেদ-১২৪ঃ বংশগত পদ দখল ও মিরাসের অধিকার আদায়ের মামলার তামাদিকাল ১২ বছর (৮ ধারার উদাহরণ সহ আসতে পারে)।

মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে আপীলের তামাদিকাল ৭ দিন।

রিভিউ সংক্রান্তঃ

  • হাইকোর্টে রিভিউ ২০ দিন।
  • স্মল কজেস কোর্টে ১৫ দিন।

আপীল সংক্রান্ত (দেওয়ানী) ঃ

  • নিম্ন আদালতে বা জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজে ৩০ দিন।
  • হাইকোর্টে ৯০ দিন (দেওয়ানী)।
  • হাইকোর্টে মূল এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে ২০ দিন।

ফৌজদারী আপীলঃ 

নিম্ন আদালত ৩০ দিন।

হাইকোর্টে ৬০ দিন।

রিভিশন সংক্রান্ত্রঃ 

  • রিভিশনের নির্ধারিত কোন সময় নাই। তবে আপীল দরখাস্তের বিপরীতে ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশন করতে হয়।
  • দরখাস্তকারীর ত্রুটির কারণে রিভিশন না-মঞ্জুর হলে ১৫ দিনের মধ্যে পুনঃর্বহালের আবেদন করতে হয়।
  • খালাসের বিরুদ্ধে আপীল ৬ মাস বা ১৮০ দিন।
  • সরকার দ্বারা সুপ্রীম কোর্টের মামলা ছাড়া যে কোন মামলার তামাদি কাল ৬ বছর।
  • যে মামলার তামাদি দেওয়া নাই সেক্ষেত্রে মামলা করার সময় পাওয়া যাবে ৬ বছর।
  • ডিক্রির টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় ৬ মাসের মধ্যে এবং ৬ বছরের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা যায়।
  • ছানী মামলা ও একতরফা ডিক্রি রদের দরখাস্ত করতে হয় ১ মাস বা ৩০ দিনের মধ্যে।
  • খাই খালাসীর তামাদিকাল ৩ বছর।
  • ডিক্রিত প্রদত্ত অর্থ কিস্তিতে পরিশোধের বৈধ প্রতিনিধিকে পক্ষভুক্ত করার জন্য ৬ মাসের মধ্যে দরখাস্ত করতে হয়।
  • যে দরখাস্তের ক্ষেত্রে তামাদি উল্লেখ নাই তার জন্য সময় পাওয়া যাবে ৬ মাস।
  • দরখাস্তের ক্ষেত্রে সর্বনিু তামাদিকাল ৭ দিন এবং সর্বোচ্চ তামাদিকাল ৬ মাস।